কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে আমার একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হওয়াটা অনেকটা ট্রমার মত ছিল। স্কুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবের একটি বড় অংশ ঢাকার বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। পারিবারিক অসম্মতির কারনে তাদের সাথে পড়তে যাওয়া হয়নি। ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় ঘুটি কয়েক নতুন বন্ধু-বান্ধবের সাথে চলাফেরা শুরু করি। তাদের ভিতর একজন সিহাব। আমার বিয়ের সময় যখন পরিবার থেকে যখন আর্থিকভাবে চাপ দিচ্ছিল সিহাব কিছু অর্থ ধার দেয় যার দেনা দিতে দিতে বেশ কয়েকটি বছর চলে যায়। সিহাব বেশ কয়েকদিন যাবৎ তার সাথে দেখা করার জন্য বলছিল; যার ফলশ্রুতিতে আজ তার সঙ্গে দেখা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদকাজগুলোর সঙ্গী রুবেলের সাথে দেখা করার সুযোগও আজ হাত ছাড়া করিনি।
সিহাব তার কর্মস্থল থেকে বের হয় ৬ঃ৩০ টায় আমি তার ৫ মিনিট আগেই হাজির হই। বের হয়েই আমি তার সাথে মারলিন রেস্তোঁরায় বসি। সম্ভবত দু'বছর পর দেখা। আমাদের কথা আর ফুরায় না। গল্পের বেশ অংশ জুড়ে আমাদের বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ-খবরই ছিল মুখ্য, সাথে ছিল কুমিল্লার রাজনীতি। ৮ঃ৩০ টা বেজে গেছে। রুবেল এবং হাসান একই সাথে কাজ করে তাই একটু মন খারাপ হয়ে গেল। মনে হল, ওদের সাথে দেখা করার সুযোগটা মনে হয়, হাতছাড়া হয়ে গেল। সিহাবকে বিদায় দিয়ে খুব দ্রুত রুবেলের অফিসের সামনে গিয়ে ফোন দেই। ভাগ্যভালো যে, সে তখনও অফিস থেকে যায় নি, কিন্তু হাসান কিছুক্ষন আগেই বের হয়ে গেছে। একটু মন খারাপ হয়ে গেল। কারন গতবারও একইরকম হয়েছিল। রুবেল তার কাজ সেরে আমাকে নিয়ে আসতে আসতে বেইলি রোডের দিকে হেঁটে গেলাম। যেতে যেতে অনেক কথা। পারিবারিক খোঁজখবর, সাথে সাথে বন্ধু-বান্ধবের খোঁজখবর তো আছেই। বেইলি রোডে গিয়ে রুবেলের আরেক বন্ধুর সাথে দেখা হল। ড্যাফোডিল ইন্সিটিউটে কাজ করেন। পুরোনো দিনের কথাগুল যাবর কাটতে কাটতেই ১০ঃ৩০ টা বেজে গেল। তাদের বিদায় দিয়ে, সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিলাম একটা ভালো অনুভূতি নিয়ে।
গত দু'তিন বছর আগে থেকেই সব বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি বা তারা দিয়েছে। এটা নিহাত এক তরফাভাবে হয়নি। বন্ধু-বান্ধবের আগ্রহের কমতি আমাকে আমার নিজস্ব জগতে মিশে যেতে সহায়তা করেছে। এলমনাইর অনুষ্ঠানগুলোতে আন্তরিকতা থেকে শো-অফের ছড়াছড়ি বেশি। কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠগুলো ঠিক আগের মতই আছে। এখন থেকে আবারও একটু চেষ্টা করব, অন্তত তাদের সাথে নিয়মিত দেখা করতে। কাছের বন্ধুগুলো আসলেই অনেক কাছের।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.