Wednesday, February 9, 2022

Low Earners দের কষ্ট কমানোর টনিক



কিছুদিন আগে 'শিশুদের দিনলিপি' নাম ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট পড়ছিলাম ছোট বাচ্চাদের জন্য হিজড়া সম্প্রদায়ের চাঁদাবাজি নিয়ে। আমার কাছে এই চাঁদাবাজিটা সমাজের অনেক অসামঞ্জস্যের সাথে নিজেকে সমঝতা করে নেয়ার একটি। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি পাড়া-প্রতিবেশি তাদের বাচ্চাদের জন্য হিজড়াদের চাঁদা দিয়ে আসছে। একসময় কুমিল্লা শহরে এর পরিমাণ অনেক নগন্য থাকলে তা এখন অলিখিত সিটি কর্পোরেশনের একটি বিলের মত হয়ে গিয়েছে বলতে হবে। আমার মেয়ে এবং ভাগিনা-ভাগনী সবার জন্যই এই চাঁদা দিতে হয়েছে। হিজড়ারা নাকি এখন মাঝে মাঝে বিভিন্ন উৎসবে চাঁদা নিতে আসে। ঝামেলা এড়ানোর জন্য আম্মু ৫০-১০০ টাকা দিয়ে দেন। আম্মুকে হিজড়ারা অফার করেছে - ছোট বাচ্চাদের খোঁজ দিতে পারলে নাকি ৫০০ টাকা দিবে। আম্মু ওনার ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান। তো ঐ ফেসগ্রুপের পোস্টে আপু বলেছিলেন, উপরতলার প্রতিবেশি নাকি নিজে বাঁচতে ঐ আপুর বাসায় যে ছোট বাচ্চা আছে -তা জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবেশির এই আচরণ - তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই ফেসবুক গ্রুপে তিনি তার কষ্টের কথা শেয়ার করেছেন। আল্লা কষ্টকেও এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, পুষে রাখলে হৃদয় ফেটে যায় আর অন্যের সাথে ভাগাভাগি করলে তা হালকা  হয়ে যায়।

গতকাল আমার বাসায় সিটিকর্পোরেশন থেকে পানির বিলের তদন্তদল এসেছিল। তিনজনের দলে একজনের বয়স ৪০ এরও বেশি এবং বাকিদের বয়স ৫০ এরও বেশি হবে। দলটি আমাদের জানালো যে, পানির পাম্পের জন্য সিটিকর্পোরেশনকে নির্দিষ্টহারে কর দিতে হয় যা আমাদের জানা ছিল না। গত ২৭ বছরে কোন তদন্তদল আসেওনি। বুঝা যাচ্ছে, সিটিকর্পোরেশন তার আয় বাড়ানোর জন্য নড়েচড়ে বসেছে বা, এটা উপরি কামানোর একটা ফাঁদ। দীর্ঘ এক ঘন্টার আলোচনায় তদন্তদল আমাদের নিয়ম-কানুন ও আইনগত দিকগুলো তুলে ধরলেন। বিলের প্রাথমিক খরচ আমাদের পক্ষে বহন বর্তমানে সম্ভপর নয় বলে আম্মু ও আমি অপরগতা জানাই। কিছুক্ষন পর তারা আমাদের পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা শিক্ষক জেনে মনে হল, তাদের করুনা হল এবং আমাদের ঘরের বেহাল দশাও এর কারন হতে পারে। বাংলাদেশে শিক্ষক কথাটা উচ্চারণ করলে,  'Low Earning, Low Eating, Low Life...Low..Low' টাইপ একটা চিত্র আমাদের চোখে ভেসে উঠে। এটার বীজ উপমহাদেশের ব্রিটিশশাসনামলেই বপন করা হয়েছে আর আশির দশকের শুরুতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ তার নতুন নতুন শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটেছে। তদন্তদল আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়ে গেলেন এবং আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে সিটিকর্পোরেশনে গিয়ে দেখা করতে বললেন। জুনিয়র তদন্তকারী কিছু চা-নাস্তার বিলও চেয়ে নিলেন। বিল নেয়ার পর আবার কিছু টাকা ফেরতও দিলেন। কেন জানি নিজেকে অনেক আর্থিক দূরাবস্থাসম্পন্ন কিন্তু সুখী পরিবারের সদস্য মনে হল। 

তদন্তদল আমাদের এমন একটি তথ্যদিল, যার সাথে 'শিশুদের দিনলিপি' গ্রুপে পোস্ট করা আপুর কষ্টের সাথে আমাদের কষ্টটা একটু মিলে যায়। আমাদের বাসায় নাকি তদন্তদলকে আমার প্রতিবেশি নানা উৎসাহ দিয়ে পাঠিয়েছেন। নাস্তার বিল বাড়িয়ে সিটিকর্পোরশনের বিল একদম Low ক্যাটাগরীতে নিয়ে এসেছেন। যাওয়ার সময় তদন্তদল ওনার কাছ থেকে সাবধানে থাকতে বললেন - 'ওনি খুব চালাক। ওনার সাথে কিছু শেয়ার কইরেন না।' কি আর করা। অনেকটা অজনপ্রিয় মাধ্যম - নিজের ব্লগে লিখলাম। মনে হচ্ছে, কষ্ট্টা Low হয়ে গিয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment.