‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ‘স্থায়ী সৎকর্ম’ তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)
বাসায় আমার তিন খালাসহ আম্মুর রুদ্ধদ্বার পারিবারিক বৈঠক পারিবারিক সম্পত্তির জটিলতা নিয়ে। মেজো খালার পারিবারিক সমস্যার কারনে ওনার ছেলেরা এসেছেন। আমার শুধু ছোট খালু বেঁচে আছেন আমার বাবাসহ বাকি খালুরা ইতিমধ্যেই আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছেন। আমার কাছে সবকিছু ছাপিয়ে চারবোনের সরলতা ধরা দিচ্ছে। ইসলামে পারিবারিক সম্পদ শরিয়াহ অনুযায়ী ভাগবটোয়ারা হওয়ার কথা থাকলে কতটি পরিবার তা মানে আমার সন্দেহ আছে। দুনিয়াবী সম্পদের মারপ্যাঁচে কত সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তার ভয় আমার ভিতর কাজ করে, সবচেয়ে বড় ভয় তিনি সব দেখেন।
সেজো খালা রাজহাঁসের অর্ধেক রান্না করে এনেছেন বোনদের খাওয়ানোর জন্য। দুপুরে আমাকে খানিকটা দেন । আহা! কি স্বাদ! অমৃত। তখনও জানতাম না ওনি ওটা আসলে পাঁচবোনের জন্য রেধেঁ এনেছেন। আমি ওদের এই ঝোলাবাতির কাহিনী তখনও বুঝে উঠতে পারেনি। ছোটখালা পারিবারিক কারনে সন্ধ্যায় চলে গেলেন। বড়খালা এবং সেজোখালা আমাদের বাসায় রয়ে গেলেন। রাতে দেখলাম বাটিতে রাজহাঁসের মাংস। লজ্জায় সরাসরি বলতে পারছেন না যে ঐ বাটি ওনারা তিনবোনের জন্য। আমার আম্মা আমাকে নির্দিষ্ট করে বলছেন, টমেটো চটকা আর ভাজি রুই মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে ফেলতে। আমি যখন ভাত নিতে গেলাম সেজোখালা এসে আমাকে বললেন যে, আমি একটু ঝোল নেই যেন রাজহাঁসের বাটি থেকে। মাংস খালারা খাবেন। হি হি! আমি গপাগপ খাবার খেলাম।
সকালে আম্মাকে দেখলাম, খালাদের চাহিদামত রুটি, সবজিভাজি আর কি কি রান্না করলেন। দুপুরে পাংগাস মাছ রান্না করলেন বড় খালার জন্য। আমি আম্মাকে বললান, রুই মাছ না রান্না করলেন, আবার পাংগাস মাছ কেন? আম্মা বললেন, "তোর বড় খালা, পাংগাস মাছ পছন্দ করেন।"
খালাম্মারা ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুখদুঃখ শেয়ার করলেন। খালারা আমাকে সারাদিন টুকিটাকি উপদেশ দিলেন, আবার মাঝে মাঝে নিজেদের দুঃখের কথাও শেয়ার করলেন। আমার সেজো খালা বলেন, "বাবা-মা সবসময় তুলনামূলক দূর্দশাগ্রস্থ সন্তানের প্রতি দূর্বল থাকেন।" আমি একসময় মনে করতাম, "বাবা-মায়ের উপর সবসন্তানের সবগুলো দুনিয়াবী মোহ-মায়ার সমান অধিকার।" আব্বা মারা যাওয়ার পর এই ধারনা থেকে সরে আসি এবং অনেকটা সেজো খালার মত করেই ভাবি। খালার সাথে শেয়ার করি যে, আমার কিছু নিকটাত্নীয় আমার বাসায় মেয়েকে দেখাশুনার করার জন্য রাখা আপাকে ফোন করে ওদের বাসায় চলে যেতে বলে এবং নিজের কষ্টের কথা জানাই। খালা আমাকে বলেন, "ওদের কাছে সম্ভবত মনে হয়েছে, তোর থেকে তাদের সমস্যা বড়। তাই তারা সব সম্পর্ক উপেক্ষা করে তোর বাসার লোককে চলে যাওয়ার জন্য অফার করে।" কথাটা আনইথিক্যাল হলেও মনোজগতের মনোস্তাত্ত্বিক ব্যাপার ভালোভাবে বোঝার জন্য যুক্তিযুক্ত একটি ব্যাখ্যা।
বড় খালার সাথে বসে টিভি দেখছি - অনুমান থেকে পারিবারিক একটি উপদেশ দিলেন। বিরক্তি চলে আসল মনে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা হতে বেঁচে থাক, কারণ, ধারণা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারও দোষ অনুসন্ধান করো না, দোষ বের করার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করো না, একে অন্যের হিংসা করো না, পরস্পরে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ আল্লাহর বান্দাহ হয়ে যাও।
পরমূহুর্তে মনে হলে, এই ৫৫-৬৫ বছর বয়সে ওদের মাঝে যে শিশুসুলভ টান আমি কি এই বয়সে বেঁচে থাকলে তা পারব। ঝুলাবাতির হিসাবনিকাশ ও তাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলোকেই পুঁজি করে তারা বেঁচে আছেন। আমরা কি নিয়ে বেঁচে থাকব ঐ বয়সটাতে?
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.